তারিখ: বুধবার, ০১ জানুয়ারি ২০২৩ ইং
প্রিয় বন্ধু রিপন (গিট্টু রিপন)
রাজপথের হে দীপ্ত সৈনিক সহযোদ্ধা তোকে জানাই সালাম। জানাই নববর্ষ ২০২৩ এর শুভেচ্ছা। তোর কথা, তোর রাজনৈতিক দর্শন, কথাকাটাকাটি, চা আসরে আড্ডা খুব মনে পড়ে। তুইতো এখন আমেরিকা আছিস।লসএঞ্জেলেসে। শুনেছি সেখানে খুব বরফ পড়েছে। বরফের চাদরে ঢেকে গেছে রাস্তাঘাট সব। তুই কেমন আছিস? ভালো তো। আজ নববর্ষের দিনে তোকে খুব মিস করছি। মনে আছে আমি আর তুই মিলে একবার নববর্ষে একটি ছাত্র সংগঠন থেকে পাহাড় ঘেরা কুমিল্লার ময়নামতি গিয়েছিলাম।সেখানে হঠাৎ আমরা দুজন এপথ ওপথ ঘুরতে ঘুরতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। আমাদের লিডার নিপু ভাই কি টেনশনে না পড়েগিয়েছিল। পরে মসজিদের ইমাম সাহেব আমাদের নিয়ে আসে। হু ভাল কথা মসজিদের ইমাম সাহেবের একটা আমাদের বয়সিই হবে সুন্দর মেয়ে ছিল। পর্দার ফাঁক দিয়ে আমাদের পানি দিয়েছিল। আমি তখন তোকে বলেছিলাম এমন একটা মেয়েকেই বিয়ে করব। তুই এমন জোড়ে আমাকে একটা ধাক্কা দিয়েছিলি যে, হাত থেকে গ্লাসটা পড়ে ভেঙ্গে গেল। আবার কাঁচের টুকরো তুলতে গিয়ে হাত কেটে রক্তারক্তি কারবার। আমাদেরকে সবাই মানিকজোড় বলতো। পাড়ার বন্ধুরা ছড়া কেটে ক্ষেপাতো-
রিপন স্বপন ভাই ভাই
পথে পাইলো মরা গাই
রিপন বলে খাইয়া যাই
স্বপন বলে লইয়া যাই
আজ আরেকটি নববর্ষ এল তোর সাথে থেকে দুজনের দুষ্টমি গুলো খুব মনে পড়ছে। মাসুম ভাইকে তুইতো চিনিস। খিলগাঁও পোস্ট অফিসের পিছনে থাকতেন। পাগলা কিছিমের মানুষ। আমাদেরকে শাহী মসজিদে রোজার দিনে গল্পের বই দিতেন। নানা প্রতিযোগতার আয়োজন করতেন। তারপর সাতাশ রমজানে ইফতার পার্টি হতো।
তার সাথেই আমার কর্ম জীবনের হাতেখড়ি।এইতো তার উদ্যোগে উনিশ সালের শেষ দিনটির সূর্যাস্ত ও বিশ সালের সূর্যোদয় দেখব বলে কদিন আগে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ভ্রমন করে আসলাম।৩ দিন ৪ রাত্রির প্যাকেজ। ঢাকা থেকে বাসে রওনা করে আটলান্টিক নামক সী বোর্টে চরে স্বপ্নের দ্বীপ সেন্টমার্টিনে পৌঁছলাম।
উড়ন্ত সিবার্ড আর সাগর মিলে যেনো সৌন্দর্যের লীলাভূমি রচনা করেছে। বোর্ট থেকে এর সৌন্দর্য যে কি রোমাঞ্চকর ছিল বলে বুঝাতে পারবো না। খুব মজা করেছি। তুই সাথে থাকলে আরো মজা হতো। অবশ্য তোর মত একজন সাংবাদিক বন্ধু বলি বা কলিগ একজন কিন্তু ছিল। বেটা আর আমি হোটেলে একই রুমে ছিলাম। দারুণ মজার লোক। আমারা মোট তিন জন। আমাদের জন্য একটি রুম বরাদ্দ হল। এর মধ্যে একজন সাংবাদিক।সামুন ভাই। এছাড়া আমার সাথে আরো যে দুজন আছে তাদের একজন উকিল। তার নাম মোস্তাফিজ আরেকজন ইঞ্জিনিয়ার নাম সাইফুল। চারজনের ক্ষণ কালের সংসার। গা- গোসল ধোয়ার জন্য রুমের বাথরুমে ঢুকে দেখি পানি নাই। ল্যা ঠ্যালা। প্রথম দিনেই এই অবস্থা। কটেজের মালিককে জানাতেই তিনি মটর ছাড়লেন। আমি একটু অবাক হলাম এই সাগর ঘেরা দ্বীপে বিদ্যুত এলো কিভাবে? জানলাম এখানে সৌর বিদ্যুত ব্যবহার করা হয়।
বিকেলে সৈকতের পথে হাঁটছি আমরা। সেখান থেকে দেখা যাচ্ছে প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদের বিখ্যাত “সমুদ্র বিলাস”। সন্ধ্যা হবার পথে সূর্য ডুবার জন্য প্রস্তুত সাগরের দূর দিগন্তে। আমারাও প্রস্তুত হলাম এই অপার সৌন্দর্যের লিলা অবলোকন করে স্বাক্ষী হতে এক অবিস্মরণীয় গোধূলি লগ্নের। কি সুন্দর দৃশ্য সূর্যটা আস্তে আস্তে সাগরের মাঝে বিলীন হয়ে গেলো।রেখে গেল এক স্বর্ণালী আভা। বিদায় ২০১৯ বিদায়। সবাই মিলে নতুন বছর এর জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করলাম।
রাতে গানের আসর বসল। চলল গান আর “মধু কই কই মোড়ে বিষ খাওয়াই লা” খ্যাত বাউল কবি রশিদ ভাইয়ের সাথে আড্ডা। আমাদের আড্ডা রাত দশটা পর্যন্ত চলল। এরপর বারবিকিউ দিয়ে ডিনার, সৈকতে ফানুষ উড়ানো দেখলাম।ঘরির কাটা রাত বারটা ক্রস করতেই শুরু হলো বর্ণালী আয়োজনে ২০২০ সালকে বরণ করে কেক কাটার উৎসব। সেদিন আমাদের প্রিয় মাসুম ভাইয়ের জন্মদিনও ছিল।
পরদিন আকাশ কিছুটা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গেল। আমোদের বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখার প্ল্যান বুঝি ভেস্তে গেল। কিন্তু না এর মাঝেও ক্ষনিকের জন্য রবি বাবু উকি দিলেন। আমরাও তাকে দেখে স্বার্থক করলাম নিজেদের। স্বাগত ২০২০।
বন্ধু এ সফর আরো দীর্ঘ ও রোমাঞ্চকর ছিল পরে অন্য এক সময় শেয়ার করব। আজ আর না। ভাল থাকিস। ভাবিকে আমার সালাম দিস। বাচ্চাদের জন্য রইল অফুরন্ত আদর ও ভালবাসা। দেশে কবে আসবি জানাস কিন্তু। তোকে নিয়ে আরেকটি রোমাঞ্চকর অভিযানে বেড়িয়ে পরব।
আল্লাহ হাফেজ।
শুভেচ্ছা অনন্ত,
স্বপন (ঘাউরা স্বপন)
loading...
loading...
চমৎকার এবং অনন্য ঘরানার স্মৃতিকথন পড়লাম। আমার কাছে বেশ লেগেছে।
এভাবেই আপনার লিখা গুলোন এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশায় শব্দনীড়ে স্বাগতম।
loading...
দারুণ ভাবনা , ভালোবাসা অবিরাম।
loading...